দুদকের মামলায়ও নড়েনি এই কর্মকর্তার ক্ষমতার খুঁটি

ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতিঃ বিআরটিএর যন্ত্রণা এডি জলিল মিয়া

Passenger Voice    |    ০৮:৩৫ পিএম, ২০২২-০৬-৩০


ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতিঃ বিআরটিএর যন্ত্রণা এডি জলিল মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ‘ঘুষ খাইলে কী হয়, জেল হয়, ফাঁসি তো আর হয় না’। এ মন্তব্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তার। এমন দৃষ্টিভঙ্গির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীতে ছেয়ে গেছে পুরো সংস্থাটি। ফলে ক্ষতি হচ্ছে সরকার, ভুগছেন সেবাপ্রার্থীরা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই দুর্নীতিবাজদের। তারা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন অপকর্ম। 

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চালকের আসনে থাকেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের দিকনির্দেশনাতে চলে প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিআরটিএর স্টিয়ারিং অনেক বছর ধরেই দুর্নীতিবাজদের হাতে। তাদের কব্জা থেকে বিআরটিএকে মুক্ত করতে শীর্ষ কর্মকর্তারা যারপরনাই চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই এ থেকে মুক্তি মিলছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির। বিআরটিএর বর্তমান প্রশাসন বিভাগ দুর্নীতি বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যা ইতিমধ্যে সেবা প্রত্যাশিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বিআরটিএর কতিপয় দুর্নীতিবাজ ভয়ঙ্কর লাইসেন্স জালিয়াতকারী সহকারী পরিচালক ও মোটরযান পরিদর্শককে। সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন বিআরটিএ সার্কেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি নিয়ে অনুসন্ধান করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। আজ প্রথম পর্বে থাকছে বিআরটিএর বরগুনা-পটুয়াখালী সার্কেলের সহকারী পরিচালক আ. জলিল মিয়া ও মোটরযান পরিদর্শক রুকুনুজ্জামান এর দুর্নীতির আমলনামা। 

বিআরটিএ বরগুনা সার্কেলের ২০০ টি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর উপর প্যাসেঞ্জার ভয়েস অনুসন্ধান করে, অনুসন্ধানে দেখা যায় প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া অবৈধ। তার মধ্যে বেশ কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্স এর রেফারেন্স নাম্বার উল্লেখ্য করা হলোঃ BNNP8884/22 , BNNP8887/22 , BNNP8889/22 ,BNNP8898/22 ,BNNP8896/22 ,BNNP8914/22, BNNP8901/22 , BNNP8900/22 , BNPC19/1256 , BNNP8922/22 , BNNP8788/22 , BNNP8632/22 , BNNP8790/22 , BNNP8789/22 , BNNP8846/22 , BNNP8856/22 , BNNP8860/22 , BNNP8861/22 , BNNP8869/22 , BNNP8865/22 , BNNP8866/22 , BNNP8875/22 , BNNP8876/22 , BNNP8871/22 , BNNP8870/22 । BNNP8048/22, BNNP8083/22, BNNP8043/22, BNNP8053/22, BNNP8052/22, BNNP8054/22 , BNNP8055/22 , BNNP8050/22 , BNNP8051/22 , BNNP7953/22 , BNNP8056/22 , BNNP8065/22 , BNNP8067/22 , BNNP8066/22 , BNNP8068/22 , BNNP8094/22 , BNNP8070/22 , BNNP8071/22 , BNNP8072/22 , BNNP8073/22 , BNNP8074/22 , BNNP8075/22 , BNNP8076/22 , BNNP8024/22 , BNNP8077/22 ।

এই সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আ. জলিল মিয়া, মোটরযান পরিদর্শক রুকুনুজ্জামান ও মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের এনরোলমেন্ট আরিফুল ইসলাম মিলে বিআরটিএর সদর কার্যালয়ের আদেশ অমান্য করে ৩৫০৫ টি পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ডাটা এন্ট্রি করেছে বিআরটিএর বরগুনা সার্কেল। ইতিমধ্যে ৩৪৯৮ টি গ্রাহক বায়োমেট্রিক প্রদান করেছে। ৯০ শতাংশ গ্রাহকের হাতে পৌঁছে গিয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট  কার্ড। সাম্প্রতিক এক আদেশে ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেষ্ট বোর্ডের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর অনুমতি নিয়ে জরুরি লাইসেন্স ইস্যু করার সুযোগটি বন্ধ করে দেয় বিআরটিএর বর্তমান চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।  তবে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের আদেশের তোয়াক্কা করেনি বিআরটিএর এই দুই কর্মকর্তা। 

মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে রার্নার ইস্যুর ২৭ দিনের মধ্যে ভুয়া ডিসিটিবি বোর্ড দেখিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করারও কিছু তথ্য পাওয়া যায় ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড পাওয়া গ্রাহদের কাছে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহনকারী অনেক গ্রাহক বরগুনা জেলার বিআরটিএ অফিসের সাথে পরিচয় নেই। তারা কখনো বরগুনা জেলায় যায়নি। তাহলে কিভাবে পেলো বরগুনা সার্কেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স । সেটাও অনুসন্ধ্যান করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । 

২য় পর্বে পড়ুন >>> বরগুনা-পটুয়াখালীর ড্রাইভিং লাইসেন্স এডি জলিলের মিরপুরের বাসায়। বায়োমেট্রিক গ্রহন ঘুষ লেনদেন বাসায় বসে করেন তিনি। 

চলতি মাসের ১৯ জুন অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর পটুয়াখালী-বরগুনা সার্কেলের এই দুর্নীতিবাজ সহকারী পরিচালক (অতিরিক্তি দায়িত্ব) আব্দুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের মামলায় তার বিরুদ্ধে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৩৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অভিযোগে আনা হয়েছে। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর বাদী হয়ে এ মামলা করেন। 

বিআরটিএর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা ভোগদখলে রাখা ও ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় এ মামলা হয়েছে।